ইনসুলিন গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

ইনসুলিন গাছের উপকারিতা ডায়াবেটিক রোগীর জন্য সুগার নিয়ন্ত্রনের এক ভেষজ উদ্ভিদ। ইনসুলিন গাছ  নিয়ে অনেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না। ইনসুলিন গাছের পাতা খাওয়ার নিয়ম মেনে চললে শরীরের সুগার নিয়ন্ত্রনে এই উদ্ভিদ অত্যন্ত কার্যকর।
ইনসুলিন গাছ


যারা এমন ডায়াবেটিক সমস্যায় ভুগছেন, তাদের বাসা বাড়িতে এই ইনসুলিন গাছের চাষ  করলে আলাদা করে ঔষুধ কিনে খেতে হবে না।

ভুমিকা

আমাদের আশে পাশে ডায়াবেটিক রোগি নাই এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না। প্রত্যেক পরিবারে কেউ না কেউ এই সমস্যায় ভুগছেন। এই রোগের স্থায়ী সমাধান এখন পর্যন্ত আবিস্কার হয় নাই। তাই যত সম্ভব কিভাবে এটা সহজে নিয়ন্ত্রন করা যায়, সেই পন্থা অবলম্বন করা হয়। আজ আমরা ইনসুলিন গাছের উপকারিতা, ইনসুলিন গাছের পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং ইনসুলিন গাছের চাষ কিভাবে করব সেই সম্পর্কে জানব।

ইনসুলিন গাছের উপকারিতা

ইনসুলিন গাছের উপকারিতা জানার আগে জেনে নিন এই উদ্ভিদ সম্পর্কে কিছু তথ্য। ইনসুলিন প্ল্যান্ট বা ফায়ারি কস্টাস নামেও পরিচিত, এটি একটি ঔষধি উদ্ভিদ যা প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। এই উদ্ভিদ বর্তমানে বাংলাদেশে চাষ করা হয়ে থাকে।
ইনসুলিন গাছের কিছু সুবিধা বা উপকারিতা এবং ব্যবহার রয়েছেঃ
  • রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণঃ ইনসুলিন উদ্ভিদের সবচেয়ে সুপরিচিত ব্যবহারগুলির মধ্যে একটি হল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত করার ক্ষমতা। গাছের পাতায় এমন উপাদান থাকে যা ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্তে গুলুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টি-ডায়াবেটিকঃ ইনসুলিন উদ্ভিদটি প্রায়শই আয়ুর্বেদ এবং কবিরাজ ওষুধ ব্যবস্থায় এর অ্যান্টি-ডায়াবেটিক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গাছের পাতা বা নির্যাস খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়াকলাপঃ উদ্ভিদটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি যার্ডিকেল গুলিকে নিয়ন্ত্রন করতে সহায়তা করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ইফেক্টসঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইনসুলিন গাছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে যা বিভিন্ন প্রদাহজনক অবস্থার জন্য অনেক উপকারী।
  • লিভার সুরক্ষাঃ উদ্ভিদটির হেপাটোপ্রোটেকটিভ উপাদান রয়েছে বলে মনে করা হয়, যার অর্থ এটি লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে এবং লিভারের স্বাস্থ্যকে উন্নীত করতে সহায়তা করে।
  • পাচক স্বাস্থ্যঃ আয়ুর্বেদ চিকিৎসা হিসাবে এই ওষুধে, ইনসুলিন উদ্ভিদ হজমের জন্য এবং হজমজনিত ব্যাধির চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আপনি যদি  ইনসুলিন গাছের উপকারিতা এবং ভেষজ প্রতিকার ব্যবহার করার কথা ভাবছেন, তাহলে সঠিক নির্দেশনা এবং পরামর্শের জন্য একজন চিকিৎসক বা ভেষজ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন

ইনসুলিন গাছের পাতা খাওয়ার নিয়ম

ইনসুলিন গাছের পাতা খাওয়ার নিয়ম কানুন নির্ভর করে অনেকটা আপনার শারীরিক অবস্থার উপর, সব থেকে ভাল হয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া। তবে, কিছু সাধারণ নির্দেশিকা নিম্নে দেওয়া হলোঃ
প্রাথমিক পরীক্ষাঃ ইনসুলিন গাছের পাতা খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি কেমন মেডিকেল কন্ডিশনে আছেন বা ঔষধ চালাচ্ছেন।সীমাব্ধতাঃ ইনসুলিন গাছের পাতা সাধারণভাবে স্বাস্থ্যকর হলেও, কোনো প্রকারের অতিরিক্ত পাতা খাওয়া উচিত নয়।
প্রস্তুতি ও সংরক্ষণঃ ইনসুলিন গাছের পাতা খোলা ভাবে সংরক্ষন না করে, আবদ্ধ পাত্রে সংরক্ষন করে খাওয়া যেতে পারে। তবে, সতেজ পাতা খাওয়ায় উত্তম।
খাওয়ার মাত্রাঃ প্রাথমিক অবস্থায় অল্প পরিমাণে খেতে পারেন, তারপরে আস্তে আস্তে পরিমান বৃদ্ধি করতে পারেন।

ইনসুলিন গাছের পাতা খাওয়ার পরিস্থিতি নির্ভর করে, আপনার স্বাস্থ্য, সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কন্ডিশন এবং ডাক্তারের পরামর্শের উপর। সেই জন্য অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খাবেন।

ইনসুলিন গাছের চাষ

বর্তমানে বাংলাদেশে ইনসুলিন গাছের চাষ অনেকে করছে। এদেশের আবহাওয়া ইনসুলিন গাছের চাষ করার জন্য উপযোগী। অনেকে এই গাছ চাষ করে উদ্যোক্তা হয়ে আয় করছে। চলুন আমরা ইনসুলিন উদ্ভিদ চাষের জন্য কিছু মৌলিক নির্দেশিকা রয়েছে তা জেনে নেইঃ
জলবায়ু এবং মাটির প্রয়োজনীয়তাঃ
জলবায়ুঃ উষ্ণ এবং আর্দ্র জলবায়ুতে ইনসুলিন চাষ ভাল হয়। এটি 20°C থেকে 35°C (68°F থেকে 95°F) পর্যন্ত তাপমাত্রাই চাষ করার জন্য উপযোগী।

মাটিঃ ইনসুলিন গাছ উর্বর মাটি এবং শুষ্ক স্থানে ভাল ফলন হয়। এর জন্য বাগানের মাটি, বালি এবং জৈব কম্পোস্টের মিশ্রণ আদর্শ স্থান হতে পারে।
  • ইনসুলিন গাছের বীজ থেকে বংশবিস্তার করা যায়। একটি ভাল পাত্রে মিশ্রণ মাটিতে বীজ ট্রে বা পাত্রে বীজ সংরক্ষন করুন। মাটি আর্দ্র রাখুন এবং পরোক্ষ সূর্যালোক সহ একটি উষ্ণ স্থানে ট্রে রাখুন
  • ইনসুলিন গাছগুলিকে ১ থেকে ১.৫ ফুট দূরত্বে রোপণ করুন। মাটি ক্রমাগত আর্দ্র রাখুন যেন জলাবদ্ধ তৈরি না নয়, কারণ অতিরিক্ত জল থাকলে শিকড় পচে যেতে পারে।
  • ইনসুলিন গাছ পূর্ণ সূর্যালোকের চেয়ে আংশিক ছায়াতে রাখতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৪-৬ ঘন্টা পরোক্ষ সূর্যালোক পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • রোপণ সময় মাটিতে ভালভাবে পচনশীল জৈবপদার্থ যোগ করতে হবে। ক্রমবর্ধমান মৌসুমে একটি সুষম জৈব সারও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  • ইনসুলিন উদ্ভিদ সাধারণত রোগে কম আক্রান্ত হয়। যাইহোক, ভাল নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করলে, এবং অতিরিক্ত জল এড়িয়ে চললে গাছের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।
ইনসুলিন গাছের পাতা পরিপক্ক হওয়ার পরে সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী পাতা সংগ্রহ করতে হবে, তবে গাছের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে একবারে এক-তৃতীয়াংশের বেশি ফসল কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

যেহেতু ইনসুলিন গাছের উপকারিতা আছে, বাড়ির আঙ্গিনায় বা টবে ইনসুলিন গাছ চাষ করলে ডায়াবেটিক সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন, আবার এর থেকে আয় ও করতে পারছেন। ইনসুলিন গাছের পাতা খাওয়ার নিয়ম  এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করলে, আশানুরুপ সুফল এর থেকে পাবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪